পুরুষে প্রজননিক সমস্যার কারণ (Cause of Male Infertility): দম্পতির পুরুষ সদস্যে প্রজননিক সমস্যার মূলে রয়েছে নিচে বর্ণিত শুক্রাণুগত বিশৃঙ্খলা।
১. বীর্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতি (Absence of sperm) : (বীর্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতিকে অ্যাজোস্পার্মিয়া (azoospermia) বলে। শুক্রাণু উৎপাদন না হওয়া বা কোন প্রতিবন্ধকতার কারণে বীর্যে শুক্রাণু অনুপস্থিত থাকতে পারে।
২. বীর্যে শুক্রাণু সংখ্যার স্বল্পতা (low sperm count) : (বীর্যে শুক্রাণু সংখ্যার স্বল্পতাকে অলিগো স্পার্মিয়া (oligospermia) বলে )প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটার বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ২০ মিলিয়নের কম। অলিগোস্পার্মিয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা নেই।
৩. শুক্রাণুর অস্বাভাবিকততা (Abnormal sperm) : অনেক শুক্রাণু ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছতে বা নিষেক ঘটাতে অক্ষম। দুটি লেজ থাকা, লেজবিহীন, মস্তকবিহীন বা অস্বাভাবিক আকৃতি ইত্যাদি হলো শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা ।
৪. অটোইম্যুনিটি (Autoimmunity) : নিজের শুক্রাণুর প্রতি বিশেষ ইমান প্রতিক্রিয়া ৫-১০% পুরুষ বন্ধ্যাত্বের বণ। রকে শুক্রাণু প্রতিরোধী আয়ন থাকা এক ধরনের ইম্যুন প্রতিক্রিয়া।
৫. শুক্রাণুর অকালপতন (Premature ejaculation) : নারী যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরে পুরুষ যৌনাঙ্গ প্রবেশের আগেই কোণুর পতন ঘটে। অভিজ্ঞতা ও অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এ অবস্থা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।
৬. পুরুষত্বহীনতা (Impotence) : যৌনাঙ্গের দৃঢ়তা রক্ষায় ব্যর্থতাও অন্যতম প্রজননিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। তবে উপযুক্ত মনোবৈজ্ঞানিক উপদেশ এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে।
নারীতে প্রজননিক সমস্যার কারণ (Cause of Female Infertility): নারীদেহে যে সব কারণে প্রজননিক সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ নিচে বর্ণনা করা হলো।
১. ডিম্বপাতে ব্যর্থতা (Failure to ovulation) : প্রায় ১০% নারী ডিম্বপাতে ব্যর্থ বলে প্রজননিক বিষয়েও বিফল হয়। ডিম্বপাতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে হরমোনঘটিত। কখনও হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থি স্বাভাবিকভাবে হরমোন ক্ষরণে ব্যর্থ হয় ফলে ডিম্বাণুর ফলিকল (ডিম্ব থলি) পরিস্ফুটিত হয় না, ডিম্বপাতও ঘটে না। অন্যদিকে, ডিম্বাশয় থেকে স্বাভাবিক হরমোনগুলো ক্ষরিত না হওয়ায় কিংবা ডিম্বাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে নির্ধারিত হরমোন ক্ষরিত হয় না বলে ডিম্বপাত ঘটে না। তবে খুশির কথা এই যে ৯০% ক্ষেত্রে হরমোন ক্ষরণে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সংশ্লষিত হরমোন ভাল কাজ দেয়।
২. ডিম্বনালির ক্ষত (Damage to the oviducts) : প্রায় ৩৫% নারীর প্রজননিক সমস্যা হিসেবে ডিম্বনালির পরমণজনিত বা এন্ডোমেট্রিওসিস (endometriosis) নামক অবস্থার কারণকে দায়ী করা হয়। এসব সমস্যার কারণে মিনালি পথে ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে বহন করতে পারে না।
৩. জরায়ুর ক্ষত (Uterus damage): প্রায় ৫-১০% নারী জরায়ু ক্ষতজনিত সমস্যার কারণে প্রজননিক জটিলতায় ভোগে। এমন ক্ষেত্রে গর্ভধারণ সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে গর্ভাবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা গর্ভপাত ঠেকানো। জরায়ুতে ছোট-বড় টিউমার হলে শল্য চিকিৎসায় সাড়ানো যায়। গর্ভনিরোধক দ্রব্যাদি ব্যবহারে ভাল কাজ করে। কখনওবা জন্মগতভাবে বিকৃত গড়নের জরায়ু দেখা যায় ।
৪. সার্ভিক্স বা জরায়ু গ্রীবার ক্ষত (Cervix damage) : গর্ভপাতের কারণে কিংবা সন্তান জন্মদানকালে সার্ভিক্সে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। ক্ষতের টিস্যু সার্ভিক্সকে সংকীর্ণ করে দেয়, মিউকাস ক্ষরণ বন্ধ করে দিতে পারে। সার্ভিক্সের মিউকাসের মাধ্যমে জরায়ুতে শুক্রাণু সহজে পৌঁছাতে পারে। সার্ভিক্স বেশি প্রশস্ত হলে তিন মাস বয়সি ভ্রূণ গর্ভপাতের শিকার হতে পারে।
৫. শুক্রাণুর প্রতি অ্যান্টিবডি (Antibodies to sperm) : কিছু দুর্লভ ক্ষেত্রে নারী তার স্বামীর শুক্রাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে। জরায়ু, সার্ভিক্স (জরায়ু গ্রীবা) ও ডিম্বনালিতে এগুলো পাওয়া যায়। ওষুধ প্রয়োগে অনাক্রম্যতন্ত্র দমিয়ে রেখে সমস্যার সমাধান করতে পারলেও আইভিএফ (IVF) সবচেয়ে ভালো পন্থা বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন ।
আরও দেখুন...